প্রফেসর ও মানবী: ১
- A Fundamentally Melancholic Soul
- Dec 19, 2022
- 2 min read
"এই যে প্রফেসর সাহেব! আমি চলে যাব?"
যাকে প্রফেসর বলে ডাকা হচ্ছে তিনি মুখ তুলে চাইলেন। মানবী কখন এসেছে, কতক্ষণ ধরে এই প্রফেসরের সামনে বসা এবং কিই বা বলছে, তার কিছুই খেয়াল করেন নি তিনি। মানবী ঠোঁট উল্টিয়ে দুঃখ দুঃখ স্বরে আবার বলল, "আমি চলে যাই?"
প্রফেসরের আসল নাম ধীমান। ধীমান অর্থ জ্ঞানী। নামের সাথে কর্মের মিল রেখে ধীমানের কাজ হচ্ছে বিবিধ বিষয়ে পড়ালেখা করা। তার পছন্দের বিষয় হচ্ছে রাজনীতি, ইতিহাস এবং অর্থনীতি। মানবী প্রায়ই ভাবে এত খটমটে ব্যাপার একটা মানুষের প্রিয় কিভাবে হতে পারে! ধীমানের বাসার বইয়ের তাকে সারি সারি বিশাল বিদ্বান বিদ্বান বই - পৃথিবীর ইতিহাস, বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের অটোবায়োগ্রাফী, বিজনেস এবং অর্থনীতির বই। ধীমানের প্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের তালিকাও একই রকম। এইসব দেখে মানবী ধীমানকে ডাকে প্রফেসর।
মানবী আর ধীমানের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মানুষ হিসেবে মানবী অতোটা ধীরস্থির না। অতোখানি জ্ঞানের পিপাসাও নাই। মাঝে মধ্যে মানবীর মনে হয় একটু কষ্টেসৃষ্টে এ জীবনটা পার করে দিতে পারলেই হয়তো মরে বেঁচে যাওয়া যায়। মনস্তাত্তিকরা এই চিন্তাকে হয়তো টেক্সটবুক ডিপ্রেসন কিংবা সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি বলে চালিয়ে দিবেন; কিন্তু যতোদিন পর্যন্ত মনে করতে পারে, মানবী এভাবেই ভেবে এসেছে। এই স্বল্প বেঁচে থাকার মাঝে অনেকখানি পদ্য আর কিছুটা গদ্য নিয়ে কাটিয়ে যাওয়াই মানবীর জীবন দর্শন।
প্রফেসর আর মানবী একে অন্যকে চেনে প্রায় বছর ছয়েক। তবে মানবীর প্রায়ই মনে হয়, এই চেনা কেবল নামে মাত্র চেনা, কেবল সময়ের কাটা ঘুরে গেলেই কি কাউকে চেনা যায়! কেউ কেউ তো যোজন যোজন কাছে থেকেও কাউকে চেনে না। প্রফেসরের এই ব্যাপারটা নিয়ে তেমন কোন মতামত নেই। এইসব তুচ্ছ আবেগ নিয়ে প্রফেসর তেমন ভাবেন না। তার ভাবনা আরো বড় পরিসরের। মানবী ভাবে কতখানি বড় হলে প্রফেসরের ভাবনার পরিসরে ঢোকা যাবে!
"মন খারাপ করে চলে যাচ্ছো মানবী?" সাবধানে ধীমান জিজ্ঞেস করে। এইসব অনর্থক প্রশ্ন করে বুঝতে চাওয়া আসলে মানবীর মনের অবস্থা। মানবী হাসে, মোনালিসার মত হাসি। যে হাসির অর্থ বোঝা যায় না, মনে হয় এ হাসিতে কিছুটা দুঃখ, কিছুটা তাচ্ছিল্য মেশানো আছে। প্রফেসর এতোসব বোঝে না। এই মানবিক আবেগের থেকে বৈশ্বিক রাজনীতি বোঝা অনেক সহজ মনে হয় ওর কাছে। মানবী অনেক জটিল, কিংবা হয়তো অনেকটাই সহজ, শুধু প্রফেসর বোঝে না।
- রাগ করে চলে যেও না মানবী। রাগ করে চলে যেতে নেই!
- হা হা হা প্রফেসর সাহেব! রাগটা করবো কার ওপর বলো!
- মনে হচ্ছে আমার উপর কিছুটা রাগ করে চলে যেতে চাচ্ছো! কিন্তু রাগ হচ্ছো কেন? আমি তোমাকে কিছুই বলিনি!
- জানো? অনেক দিন আগে আমার বাবা বলেছিল "কোন কিছু না বলাও এক ধরণের বলা।" তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। এখন হাড়ে হাড়ে ও কথার মর্ম বুঝি। প্রফেসর তোমার এতো জ্ঞানের বই, কিন্তু মানুষকে চেনার ব্যাপারে তোমার এতো জ্ঞান কম কেন বলো তো?
- আমি তোমাকে মানুষ হিসেবে প্রায়ই হতাশ করি তাই না?
- নাহ! হতাশ কেন করবে? আমি তো জানিই তুমি মানুষটাই এমন। হতাশ তো আমি নিজেই নিজেকে করি।
- কিরকম?
- এই যে তুমি মানুষ এরকম জেনেও ইচ্ছে করে তুমি একটু মুখ তুলে চাইবে, দু একটা পাগলামো করবে, হয়তো...
- হয়তো?
- কিছু না
- বলো মানবী। না বললে আমি শিখবো কি করে?
- এসব কি বলে শেখানো যায়?
- কেন যাবে না। জানো মানুষকে কতরকম ভাবে কন্ডিশন্ড করা যায়? এটা নিয়ে কত রকম গবেষণা হয়েছে? পাভলভ'স থিওরী জানো?
মানবী হেসে দেয়!
- কি হলো হাসো কেন?
- এই যে! তোমাকে আবেগ শেখানোর মাঝে তুমি আমার পাভ্লভের থিওরী শেখাচ্ছো?
- ওহ! আচ্ছা! ঠিক আছে! তাহলো বলো? হয়তো কি?
- বাদ দাও প্রফেসর।
- বলো না মানবী! আমাকে ছাড়া কাকে বলবে?
- হয়তো আমাকে একটু ভালবাসার কথা বলবে...
নীচের ঠোঁট কামড়ে মানবী বলে। এই সংলাপ, এই চাওয়ার বাহুল্য অনেকটাই অর্থহীন। মানবী জানে। তবু...
তবু এই ভালবাসা, ধুলো আর কাদা...
Comments